সাহিত্যের অনুষঙ্গ ও অন্যান্য প্রবন্ধ

সাহিত্যের অনুষঙ্গ ও অন্যান্য প্রবন্ধ

By: Muhammad Farid Hasan

সাহিত্যের অনুষঙ্গ ও অন্যান্য প্রবন্ধ
আ ব দু র রা জ্জা ক 

জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা-চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য যা কিছু আছে, তা শিল্পের মাধুর্যের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। লেখকের শব্দশস্যে প্রকাশিত হয় সমাজবাস্তবতা, প্রেম-বিরহ, জাতিগত স্বকীয়তা, দুঃখ-যাতনা, সংগ্রাম। তাই একটি জাতি বা গোষ্ঠীর সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছানোরও মাধ্যম হচ্ছে মানসম্মত শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ। সমাজবাস্তবতায় তা কখনো বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আবার পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করতে পারে। মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘সাহিত্যের অনুষঙ্গ ও অন্যান্য প্রবন্ধ’। এ গ্রন্থের বিষয়বস্তু হলো- সাহিত্যের উপাদান, বিষয়-আশয়, সমাজ, রাষ্ট্র, মানুষ, ইতিহাস-ঐতিহ্যের সম্পর্ক, বরেণ্য সাহিত্যিকদের জীবন ও কর্ম এবং চিত্রকলার নানা দিক। এতে লেখক সাহিত্যের অনুষঙ্গ সন্ধানের প্রয়াস করেছেন। দৃষ্টি দিয়েছেন প্রাচীনকাল থেকে এ সময়ের গুণী সাহিত্যিকদের সৃজনের ওপর। তিনি দেখিয়েছেন, সাহিত্য রচনার অনুষঙ্গ ও বিষয় প্রায় ক্ষেত্রে এক হলেও উপস্থাপন ভঙ্গির কারণে তা নানারূপ লাভ করে।শিল্প-সাহিত্য সমাজের আয়না। কিন্তু সাহিত্য কতটুকু যথাযথ হলো তা পরিমাপের উপায় কী! সমালোচনা সাহিত্য এ বিষয়ে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। ‘সমালোচকের দায়বোধ’ নিবন্ধে মুহাম্মদ ফরিদ হাসান সমালোচনা সাহিত্যের গতি, প্রকৃতি, ইতিহাসের শেকড় অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে প্রেমের উপস্থাপন এক ব্যতিক্রম ধারায় উদ্ভাসিত হয়েছে। সাহিত্যিকরা প্রেমকে অনুষঙ্গ হিসেবে বেছে নিয়েছেন সেই প্রাচীনকাল থেকেই। ‘সাহিত্যে প্রেম’ এ গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য একটি প্রবন্ধ। লেখক সাহিত্যে উপস্থাপিত প্রেমের বিচিত্র রূপরেখা পাঠক সম্মুখে তুলে ধরেছেন। মানবজীবনে সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, স্বপ্ন, মায়া-মমতা, দেশপ্রেম আছে। অপরপক্ষে রয়েছে অন্ধতা, কুসংস্কার, অপশাসন, অত্যাচার, নিপীড়ন, সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব। লেখক-শিল্পীরা এই অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। তাদের সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় এই প্রতিবাদ। ‘সাহিত্যে দ্রোহ সাহিত্যে প্রতিবাদ’ প্রবন্ধে লেখক বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত শিল্পী-সাহিত্যিকরা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ সূচিত করেছেন তার একটা রূপরেখা তুলে ধরেছেন। মধ্যযুগে কবি আবদুল হাকিম কবিতা, দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’, বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’, কবি সুকান্ত, বেগম রোকেয়া থেকে হেলাল হাফিজ পর্যন্ত লেখকদের প্রতিবাদ-ভাষ্য এ নিবন্ধে উদাহরণসহ তুলে ধরেছেন।আরেকটি প্রবন্ধের কথা না বললেই নয়। ‘কবি কিংবা শব্দশিকারীর পাঠ’ প্রবন্ধে লেখক ‘কবি-সত্তা’র সন্ধান করেছেন। তার মতে, ‘একজন কবির চিন্তায় শব্দ-স্রোত বহমান, চেতনায় পৃথিবীর বিচিত্র লীলা-রূপ-রস-বৈচিত্র্য খেলা করে। প্রতিভার স্ফুরণ, ধারাবাহিক চর্চা কবি হয়ে ওঠার শর্ত।’ বইয়ের মাঝামাঝি প্রবন্ধ/নিবন্ধগুলো বিশ^বরেণ্য চিত্রকরদের জীবন ও সৃষ্টিশীলতাকে উপজীব্য করে লেখা। ‘ভ্যান গগ : তাঁর ছবি তাঁর যাপন’, ‘সাদভাদর দালি : খেপাটে এক সৃষ্টিশীল’, ‘পাবলো পিকাসো : রঙ-তুলির জাদুকর’, ‘ফ্রিদা কাহলোর স্বরূপের সন্ধানে’ প্রবন্ধগুলো সুখপাঠ্য। এ ছাড়া ‘রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো’ এবং ‘নজরুল ও তাঁর কবিতায় নারীগণ’ প্রবন্ধ দুটিও পাঠকের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য। অন্যান্য প্রবন্ধগুলো হলো : ‘কবিতার অন্দর-বাহিরের জসীমউদ্দীন’, ‘যতীন্দ্রমোহন বাগচী : শতাব্দীর আলোয় রাখা মুখ’, ‘প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় : বাংলার মোপাসাঁ’, ‘মুজতবা আলীর ছোটগল্প : পথ ও পথিকের নিবিড় আখ্যান’, ‘আবু ইসহাকের হারেম : সমাজমুখী গল্পের ভুবন’, ‘সুকান্তের চিঠি’, ‘শামসুর রাহমান : কালের হৃদস্পন্দন’, ‘বুকে তাঁর কবিতার জখম’, ‘সৈয়দ হক ও তাঁর নিষিদ্ধ লোবান’ ইত্যাদি। ‘সাহিত্যের অনুষঙ্গ ও অন্যান্য প্রবন্ধ’টি প্রকাশ করেছে দেশজ প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন সাইফ আলী। পৃষ্ঠা ১৬৮, মূল্য ২৮০ টাকা। পাওয়া যাবে রকমারিতে।

No reviews yet.